সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক :
রাজধানীর ১৫টিসহ ঢাকা জেলার ২০টি আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী কারা, এই বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে দলে। দশম সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর দুটিসহ জেলায় তিনটি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এবার তারা চাইছে সব মিলিয়ে চারটি। আবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পাচ্ছে একটি।
এরই মধ্যে গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী একটি আসনে প্রার্থী পাল্টাচ্ছে, এটি নিশ্চিত প্রায়। এর বাইরে রাজধানীর বাইরে তিনটি এবং রাজধানীতেও তিনটি আসনে প্রার্থী পাল্টাতে পারে মহাজোটের।
ঢাকা-১
দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে নেই। জাতীয় পার্টির নেতা সালমা ইসলাম এই আসনের সংসদ সদস্য।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুল মান্নান খানকে হারিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। এবার সেখানে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে চান শিল্পপতি সালমান এফ রহমান।
মান্নান খানও নৌকা পেতে চান। যদিও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন সাবেক ছাত্রনেতা পনিরুজ্জামান তরুণ।
ঢাকা-২
কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাতটি এবং সাভারের তিনটি ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।
ঢাকা-৩
কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ইউনিয়ন নিয়ে আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এবারও মনোনয়ন আশা করছেন তিনি। এই আসনে আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন ফরম কেনা হলেও আলোচনা নেই তেমন কাউকে নিয়ে।
ঢাকা-৪
শ্যামপুর ও কদমতলী থানা নিয়ে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। জোটের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। যদিও এবার আওয়ামী লীগ এই আসনটি ছাড় দেয় কি না, এ নিয়ে আছে আলোচনা।
এখানে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী ২০০৮ সালে জয়ী সানজিদা খানম, দলীয় সভাপতির এপিএস আওলাদ হোসেন ও শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন।
ঢাকা-৫
ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানার পুরোটা এবং কদমতলী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা। এবার মনোনয়ন চাচ্ছেন তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল। আরও আছেন হারুনুর রশীদ মুন্না ও কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
ঢাকা-৬
সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি থানা নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। ২০০৮ সালে এখানে আওয়ামী লীগ জিতলেও দশম সংসদ নির্বাচনে জাপা নেতাকে ছাড় দেয় ক্ষমতাসীন দল।
এবারও ফিরোজ রশিদ মহাজোটের প্রার্থী হতে চান। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাইদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও সূত্রাপুর থানার সভাপতি মো. শহীদ।
ঢাকা-৭
লালবাগ, চকবাজার ও বংশাল থানার ১৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। দশম সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। এবার তিনিই মনোনয়ন পেতে পারেন বলে প্রচার আছে।
তবে গতবারের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন, হাজী সেলিমের বড় ছেলে সুলাইমান সেলিমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
ঢাকা-৮
রমনা ও মতিঝিল থানা নিয়ে গঠিত আসনটি ২০০৮ সাল থেকেই জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এবারও অন্যথা হবেÑএমন কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।
যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন সম্রাট।
ঢাকা-৯
মুগদা ও সবুজবাগ থানা নিয়ে আসনটিতে গত চারটি নির্বাচনের তিনটিতেই জিতেছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের এবারের প্রার্থী হিসেবেও তিনিই আলোচিত।
তবে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৯৯১ সালের প্রার্থী মোজাফফর হোসেন পল্টুও এখান থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
ঢাকা-১০
ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট এবং হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস। তার মনোনয়ন নিশ্চিত প্রায়।
ঢাকা-১১
বাড্ডা ইউনিয়ন, বেরাইদ, ভাটারা ও সাঁতারকুল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আসনটিতেও গত চার নির্বাচনের তিনটিতে জিতেছেন শিল্পপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ। এবারও তিনি শক্তিশালী প্রার্থী।
ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের ছেলে শামীম ইসলামও এই আসনে প্রার্থী হওয়ার আশায় আওয়ামী লীগের ফরম নিয়েছেন। ঢাকা-১ আসন সালমার বদলে সালমান এফ রহমানকে দিলে এই আসনটি শামীমের জন্য চাইবেন সালমা।
ঢাকা-১২
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তেজগাঁওয়ের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবার মনোনয়ন পাচ্ছেনÑএটা মোটামুটি নিশ্চিত।
তবে এখানে মনোনয়ন চাইছেন যুবলীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী। মহাজোটে যোগ দেওয়ার আলোচনায় থাকা বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানও এ আসনটি চাইতে পারেন বলে প্রচার আছে। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন।
ঢাকা-১৩
মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এবার তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে প্রচার আছে। যদিও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনসহ একাধিক নেতা প্রার্থী হতে চান।
ঢাকা-১৪
মিরপুর ও শাহ আলী থানায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম। কয়েক মাস আগেও তার খেলাপি ঋণ ছিল। তবে পুনঃ তফসিল করিয়ে ভোটে দাঁড়ানোর আইনি বাধা কাটিয়েছেন তিনি।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন এবং বিএনপিপন্থী সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন ডিপজল এই আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হতে চান।
ঢাকা-১৫
মিরপুর, কাফরুল, ভাসানটেক ও শেরেবাংলা নগর থানার আংশিক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ভাই এখলাছ উদ্দিন মোল্লাও প্রার্থী হতে চাইছেন। যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমও চান নৌকা।
ঢাকা-১৬
পল্লবী-রূপনগর থানার অন্তর্গত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তিনি আবার প্রার্থী হতে চান। তবে এম এ মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফকির মহিউদ্দিনও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়।
ঢাকা-১৭
গুলশান-বনানী-বারিধারা এবং ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ। এই আসনে ২০০৮ সালের মতোই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাকে ছাড়ও দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান, কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক গুলশান থানার সভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির সভাপতি নাজমুল হুদাও।
ঢাকা-১৮
উত্তরা ও খিলক্ষেত থানা নিয়ে গঠিত আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন টানা তৃতীয় জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। তবে তার মনোনয়ন নিয়ে সংশয় আছে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান।
আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি চেয়েছে জাতীয় পার্টি। দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হতে চান।
ঢাকা-১৯
সাভার উপজেলার সিংহভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এনামুর রহমান। এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবারও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে।
তবে সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফিরোজ কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা এবং যুবলীগের নেতা ফারুক হাসান তুহিনও নৌকা চান।
ঢাকা-২০
ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মালেক আবার ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিম খান এবং যুবলীগের নেতা মিজানুর রহমানও সক্রিয়।